Kojagori: নিশীথে বরদা লক্ষ্মীঃ জাগরত্তীতিভাষিণী
আজ কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। শরৎ পূর্ণিমার দিনে বাংলার ঘরে ঘরে লক্ষ্মীপুজো করা হয়। দুর্গাপুজার কয়েকদিন বাদেই আশ্বিন মাসের শেষের পূর্ণিমাতে যে লক্ষ্মী পুজো পালিত হয়, তাকে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো বলা হয়। এই পুজা কোজাগরী নামে প্রচলিত হলেও অনেকেই এই কোজাগরী / কোজাগর কথার অর্থ জানেন না।কোজাগরী মানে কি?শরৎ-কালের পূর্ণিমার রাত্রিই সাধারণ ভাবে বছরের সবচেয়ে উজ্জ্বল রাত্রি বলে ধরা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এই রাত্রে ধনসম্পদ, প্রাচুর্য, সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধির দেবী মা-লক্ষ্মী স্বর্গের বিষ্ণুলোক হতে ধরাধামে আসেন এবং মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে কে জেগে আছ? এই প্রশ্ন করেন। নিশীথে বরদা লক্ষ্মীঃ জাগরত্তীতিভাষিণী।তস্মৈ বিত্তং প্রযচ্ছামি অক্ষৈঃ ক্রীড়াং করোতি যঃ।।নিশীথে বরদাত্রী লক্ষ্মীদেবী কে জেগে আছ বলে সম্ভাষণ করেন। যে সেই রাতে লক্ষ্মীব্রত করে জেগে থাকে দেবী তার কাছ থেকে সাড়া পান এবং তার গৃহে প্রবেশ করে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করেন। আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথি এবং ঐ তিথিতে অনুষ্ঠিত লক্ষ্মীপূজাকে যথাক্রমে কোজাগরী পূর্ণিমা এবং কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা বলে অভিহিত করা হয়। কথিত আছে লক্ষ্মী দেবী ধরায় এলে, প্যাঁচা আনন্দিত মনে সারারাত কোলাহল করে বেড়ায় দেবীর সাথে। ভোরের আলো দেখে প্যাঁচা গাছের কোটরে ঢুকে পড়লে কাঠঠোকরা ওই কোঠর থেকে বেরিয়ে যায়। কাঠঠোকরাকে দেখে দেবী ভাবলেন ইনিই তাঁর বাহন। খুশি মনে মুকুট দিলেন কাঠঠোকরার মাথায়। জন্ম হলো এক চাকমা প্রবাদের- প্যাঁচায় কুড়কুড়ায়,খোড়ইল্যা সোনার তুক পায়।বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, কোজাগরী শব্দটির উৎপত্তি কো জাগতী থেকে। এর আক্ষরিক অর্থ কে জেগে আছো? আরও কথিত আছে, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিনে ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী স্বর্গ থেকে মর্ত্যে অবতরণ করেন এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলকে আশীর্বাদ দেন। কিন্তু যার বাড়ির দরজা বন্ধ থাকে, তাঁর বাড়িতে লক্ষ্মী প্রবেশ করেন না ও সেখান থেকে ফিরে চলে যান। তাই লক্ষ্মী পুজোর রাতে জেগে থাকার রীতি প্রচলিত আছে। সারারাত জেগে লক্ষ্মী আরাধনাই এই পুজোর বিশেষত্ব। আবার প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, শরৎ পূর্ণিমার রাতে যে জেগে অক্ষক্রীড়া অর্থাৎ পাশা খেলেন, লক্ষ্মী তাঁকে ধনসম্পদ দান করেন। আবার দক্ষিণবঙ্গের অনেক জায়গায় কিছু মানুষ কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন অন্যের বাগান থেকে ফল বা শস্য চুরি করে থাকে। তাঁদের ধারণা, এর ফলে লক্ষ্মী তাঁদের আশীর্বাদ দেবেন।নানান রূপে লক্ষ্মী:লক্ষ্মীর মূর্তি পুজো ছাড়াও আরও নানান ভাবে লক্ষ্মীকে কল্পনা করে এদিন তাঁকে পুজো করা হয়। যেমন- আড়ি লক্ষ্মী। এ ক্ষেত্রে ধান ভর্তি ঝুড়ির ওপর কাঠের লম্বা দুটি সিঁদূর কৌটো লালচেলিতে মুড়ে মা লক্ষ্মীর রূপ দেওয়া হয়। আবার কলার পেটোর তৈরি নৌকা বানিয়ে লক্ষ্মী আরাধনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই প্রথাকে কে সপ্ততরী বলা হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক নৌকার প্রতীক হল এই সপ্ততরী। অনেকেই পুজোর সময় এই সপ্ততরীতে টাকা, শস্য, হরিতকি, কড়ি, হলুদ রেখে মা লক্ষ্মীর উদ্দশ্যে নিবেদন করা হয়।আবার প্রকারভেদে সরায় (মাটির পাত্র) পটচিত্রের সাহায্যেও লক্ষ্মীপুজো করা হয়ে থাকে। যেমন-ঢাকাই সরা, ফরিদপুরি সরা, সুরেশ্বরী সরা ও শান্তিপুরি সরা। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় লক্ষ্মীসরা আঁকা হয়। অঞ্চল ভেদে এই সরায় তিন, পাঁচ, সাতটি পুতুল আঁকা হয়। এতে থাকে লক্ষ্মী, জয়া ও বিজয়া-সহ লক্ষ্মী, রাধাকৃষ্ণ, সপরিবার দুর্গা ইত্যাদি। সুরেশ্বরী সরায় মহিষাসুরমর্দিনী আঁকা থাকেন আর এই সরার নীচের দিকে থাকেন সবাহন লক্ষ্মী। আবার কলার বের ও লক্ষ্মীর মুখ সমন্বিত পোড়া মাটির ঘটকেও অনেকে দেবী লক্ষ্মী রূপে কল্পনা করে পুজো করে থাকেন। এই ঘটে চাল বা জল ভরে সেটিকে লক্ষ্মী মনে করে পুজো করা হয়ে থাকে।